প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫ । ৭:০৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

এনবিআর বিলুপ্তি: বন্ধ থাকবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও

সংবাদচিত্র রিপোর্ট

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি বিভাগ করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তা বাতিলের দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।

সোমবার থেকে দেশের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা। ফলে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে পরিষদ। গত ১২ মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

পরদিন থেকে তা বাতিলের দাবিতে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। তবে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক এটাই প্রথম। সরকারের তরফে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার কাছে পরামর্শ পাওয়ার দাবি করা হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের কাছে তিনটি প্রশ্ন তুলেছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। তারা বলছে, “রাজস্ব সংস্কার ও নীতি আলাদা করার লক্ষ্যে কোনো দাতা সংস্থা এনবিআর বিলুপ্তির পরামর্শ দিয়েছে কিনা? “অধ্যাদেশ করার সময় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সঙ্গে এনবিআর বিলুপ্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা?” “কোনো উন্নয়ন সহযোগী ঋণের শর্ত হিসেবে এনবিআর বিলুপ্ত করার কথা বলেছে কিনা?”— এমন প্রশ্নও তুলেছে পরিষদ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর আহরণ ও নীতির প্রতিষ্ঠান নির্বাহী বিভাগের অধীনে নয়, বরং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা নীতি ও প্রশাসন আলাদা করতে চাইলেও এনবিআর বিলুপ্ত করে নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত করার সুপারিশ করবে না বলেই এসব প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। “আমরা এনবিআরের আমূল সংস্কার চাই। আমরা সবসময় সংস্কারের পক্ষে ছিলাম এবং আছি। আমাদের চাওয়া, এই সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত সর্বোত্তম ব্যবস্থা ও পদ্ধতির অনুরূপ।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সরকারের রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়নকে আলাদা করার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কারের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত। তবে জারি করা অধ্যাদেশে দুটি বিভাগ গঠনের মাধ্যমে সংস্কারের যে অপরীক্ষিত মডেল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। “একটি স্বতন্ত্র রাজস্ব এজেন্সির পরিবর্তে দুটি বিভাগ গঠনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুন্ন করে কর-রাজস্ব আহরণে জ্ঞান, দক্ষতা ও বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতাবিহীন কোনো গোষ্ঠীকে ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।”

পরিষদ বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম স্বাধীন ও স্বতন্ত্র এজেন্সি বা সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরে। পরিষদ বলছে, “আমরাও চাই, আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের উন্নয়নের রাজস্ব আহরণ করুক।”

তাদের আন্দোলন চলছে এখন চার দাবিতে। জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে এ আন্দোলনের মধ্যেই শনিবার রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন বলে অনেকের মুখে শোনা গেছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা সরাসরি বাদানুবাদে না গেলেও ভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধা দেন। পরে ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়

প্রিন্ট করুন