ধ্যান সভার উকিল পূণ্য আকন মুন্সীর জবানিতে বর্ণিত রফিক মোহাম্মদের জীবনের গল্পই ‘এইতো জীবন’। লেখক এই উপন্যাসে প্রকৃতির সাথে জীবনের হারিয়ে যাওয়া ও প্রকৃতির মধ্যেই মানুষের বেড়ে ওঠার বিষয়ে বিশদ ধারণা দিয়েছেন,ইঙ্গিত দিয়েছেন পৃথিবীতে প্রাণীকুলের বিবর্তন ধারার। উপন্যাসের শেষ পঙক্তিতে দেখা যাচ্ছে ভোরবেলা সদরঘাটে লঞ্চ এসে থামে। রফিক মোহাম্মদ ভাবতে থাকে এখন আমি কি করবো? কোথায় যাবো? তবু মানুষের সারির সাথে আমি নামি। আমার চতুর্দিক ঘুরছে, আমার সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। আমি দেখতে পাই দূরে বহুদূরে সাদা আর কালো মেঘের প্রাচীর ঘেরা একটি দেশ, সেখানে সৃষ্টির আদি থেকে এ যাবৎ কাল যত মানুষ মারা গেছে তারা বসবাস করছে। সেখান থেকে এক নারী দ্রুত দৌড়ে আসছে আমার দিকে। আমি চিনতে পারি। আমি ভালোভাবে চিনতে পারি। আমি চিৎকার করে হাত বাড়াই-মা মা—। লেখক এখানে বস্তুবাদ ও ভাববাদের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন।
লেখক ফিরোজ আলম এইতো জীবন উপন্যাসের মূখ্য চরিত্র রফিক এর জীবন গল্প সমাজের বাস্তব কোন চরিত্র থেকে চর্চিত হয়েছে বলে মনে হতে পারে যেকোন পাঠকের। রফিক মোহাম্মদের লেখাপড়া গ্রামের প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত। তার অসূস্থ্য বাবাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন সে আর তার মা বরিশালের রাস্তায় ভিক্ষা করতো। বাবা যক্ষা হাসপাতালে মারা যায়, কিছুদিন পর তার মাও মারা যায়। তারপর থেকে একার জীবন। রেস্টুরেন্টে বয়ের চাকরি সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসা। ঢাকায় এসে টোকাই জীবন। সেখান থেকে টোকাই জীবন। সেখান থেকে কলকাতা বুক হাউসে চাকরি। আর এই বইয়ের দোকানে চাকরি করতে গিয়ে তার জীবনে এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। প্রচুর পড়ালেখা করে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হয়। ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু এই তিন ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারত। কিন্তু তার কোন চাকরি ছিলনা।
ঢাকার ডিসি অফিসে জমি জমা সংক্রান্ত কাজকর্ম করে একটি বাড়ি,গাড়ি কিছু টাকার মালিক হয়েছিল সে। গর্ভজাত সন্তানের দায়িত্বসহ আমিনা বেগমের সাথে নাটকীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল তার কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে দূরে চলে যায় আমিনা বেগম ও তার সন্তান কবির। অফিস দখল করে নেয় মহব্বত নামের একজন। করোনাকালে ভাগ্যক্রমে বেচে যায়, হাসপাতালে পরিচয় হয় সন্তানতুল্য ডাক্তার শিপ্রার। মাঝে মধ্যে তার মনে পড়ে সদরঘাটের সেই পাগলী মায়ের কথা যে তাকে কিছু সময়ের জন্য সন্তানের মতো আগলে রেখেছিল। মনে পড়ে পুরান ঢাকার দিদির কথা যে তাকে ভাইয়ের মতো আদর করতো এবং বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
রফিক মোহাম্মদ মিনতি ও আরতিকে সন্তানের মতো করে স্নেহ করে তাদের প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে এছাড়া তার সহযোগী নুরুর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও সহানুভূতি কাজ করে। এছাড়া এই বইয়ে লেখক প্রকৃতির প্রতি বিশেষ আনুকূল্য প্রদর্শন করেছেন স্টিফেন হকিং এর লেখা সে পছন্দ করে। যেমন একটি মেয়ে যখন চাকরি পাবার জন্য তার কাছে দোয়া চায় তখন সে কোন প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনা।
এছাড়া লেখক এই বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং সেই সময়ের নেতাদের কথা স্মরণ করেছেন। রফিক মোহাম্মদের বয়স এখন ৬৫ এর কাছাকাছি, এখন সে নিঃস্ব মানুষ। আসলে এই বয়সে আবার কী রফিক মোহাম্ম ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? সব কথার উত্তর পেতে এইতো জীবন উপন্যাস পড়ুন। বইটি পাওয়া যাবে রকমারি ডটকমে।\
সংবাদচিত্র ডটকম/শিল্প ও সাহিত্য