প্রকাশের সময়: শনিবার, ২২ মে, ২০২১ । ৯:০৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

ইউরোপ যাওয়ার পর যেভাবে শিক্ষক হলাম

অনলাইন ডেস্ক
জার্মানির দ্রেসদেন বিমানবন্দরে নেমেই বুকটা প্রচণ্ড শূন্য শূন্য লাগছিল। গাল বেয়ে চোখের জল ঝরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। এদিকে চোখের জল মুছতে মুছতে পকেটে টিস্যুও শেষের পথে।

দিনটি ছিল ২০০৬ সালের ৭ জুন। ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েছি – দুই পথের দিকে। আমার আড়াই বছরের কন্যা ও তার বাবা, আমার জীবনসঙ্গীকে রওনা দিতে হল অন্য একটি দেশে, আমাকে জার্মানির দ্রেসদেনের দিকে।

আমার এটি প্রথমবারের মতো ইউরোপে আসা। বিমানবন্দরে বহির্গমন অংশে একটি বেঞ্চে বসে আছি। পরিচ্ছন্ন বাইরে ঝলমল রোদ। কিছুক্ষণ পর পর লাল খয়েরি রঙের বাসগুলো এসে লোক নামিয়ে উঠিয়ে নিচ্ছে। আমার ফাঁকা লাগছে। কিছু ভাবতে পারছি না। সব সৌন্দর্য আমার চোখের মনোযোগের কাছে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ভাবনায় আমার মেয়ের মুখ ছাড়া সামনে আর কিছুই দেখছি না!

দ্রেসদেনে আমি

আনমনে অপেক্ষা করছি এখানকার দুই গবেষণা সহকর্মীর জন্য। ওদের নাম ডারিনা ও ইনেস। ওদের সঙ্গে এখানে দ্রেসদেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার গবেষণার কাজ করবো। আমার পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের নাম থমাস স্মিথ। তিনি মেইল করে জানিয়েছিলেন, ডারিনা ও ইনেস আমার কাছ থেকে গবেষণার উপাদান অর্কিড গাছ সংগ্রহ করতে আসবে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর ওরা দুইজন আসলো এবং অর্কিডগুলো নিয়ে ওরা সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেল। গাছগুলোকে দ্রুত গ্রিন হাউসে রাখতে হবে তাই।

ছোট বড় ভারী ব্যাগগুলো নিয়ে আমি টেক্সিতে রওনা দিলাম ভাষা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশে । আমি যে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছি, এটি জার্মান শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমের (DAAD- Deutscher Akademischer Austaus Dienst) অংশ। এটির একটি শর্ত হলো, আমাকে চার মাস জার্মান ভাষা শিখতে হবে। ট্যাক্সি চলছে, বাইরে তাকিয়ে আছি। উদাসীন চোখ, কিছুই দেখছে না। অবশেষে ভাষা ইনস্টিটিউটের সামনে এসে ট্যাক্সি থামল। গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন স্বদেশের এক ভাই, আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। আমার ভারী ভারী ব্যাগগুলো তিনি টেনে ওঠালেন|

ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরটা চমৎকার। পরিচ্ছন্ন। আপন আপন লাগল, বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের অবলীলায় বিচরণ দেখে। অফিসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রওনা দিলাম ছাত্রাবাসের দিকে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা নেমে আসল। বুকে চেপে থাকা শূন্যতা আবার আমাকে ঘিরে ধরলো।

চোখের জল আবারো নিয়ন্ত্রণ হারাতে লাগলো। ফোনে খোঁজ নিলাম আমার মেয়ের। আমার বাচ্চা মেয়েটি বিমানবন্দরে এক ভদ্রমহিলাকে তার মায়ের মত দেখে মা মা বলে ডেকে কাছাকাছি গিয়ে মাকে না পেয়ে হতাশ হয়েছিল!

জার্মান ভাষা শেখার পালা

পরদিন থেকে জার্মান ভাষার ক্লাস শুরু। আমাদের ক্লাসে আমরা ১৬ জন শিক্ষার্থী ছিলাম, ১০-১২টি দেশের। এরমধ্যে আমরা চারজন বাংলাদেশের। চারজনের প্রত্যেকেই এদেশে পিএইচডি করতে এসেছি। ভাষা শিক্ষা শেষে প্রত্যেকে বিভিন্ন শহরে যার যার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবেন। প্রতিদিন বিভিন্ন আকর্ষণীয় কার্যক্রমের মাধম্যে নতুন একটি ভাষা শেখা ছিল আনন্দের। ক্লাস থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া ছিল পাঠদানের আরেকটা মজার অংশ।

প্রিন্ট করুন