প্রকাশের সময়: রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২২ । ১০:৫৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

অবশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। যান চলাচলের জন্য সোমবার (১০ অক্টোবর) খুলে দেয়া হবে শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সোমবার দুপুর ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেতুর পুরো কাজ শেষ হলেও রোড মার্কিংসহ ফিনিশিংয়ের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তবে উদ্বোধনের জন্য এরইমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সেতুটি উদ্বোধন করলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা সড়ক বিভাগ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফরাজিকান্দা এলাকায় সেতুটির টোল প্লাজা প্রান্তে প্রজেক্টরের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন জেলা প্রশাসকসহ সংসদ সদস্যরা।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ শহর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন।

১ হাজার ২৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। নদীর গভীরে পাঁচটিসহ মোট ৩৮টি খুঁটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। এটি চালু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমবে অন্তত নয় কিলোমিটার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের সঙ্গে বন্দর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।

মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্ট দিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সুপার এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এই সেতু। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ও সাইনবোর্ডসহ কমবে রাজধানীর যানজটও। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মধ্যে যোগাযোগের পথ সহজ হবে, উন্নতি হবে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থারও। পদ্মা সেতু দিয়ে চট্টগ্রামগামী দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো এই সেতু ব্যবহার করলে সময় বাঁচবে দুই ঘণ্টা।

নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলার মাঝখানে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ পর্যন্ত তেরোটি খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলারে ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হন শহর-বন্দরের দুই লক্ষাধিক মানুষ। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শীতলক্ষ্যার ওপর মদনগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় নারায়ণগঞ্জবাসীর এই স্বপ্নের সেতুটি। সেতুটির নামকরণ করা হয় শহর-বন্দর আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে। ছয় লেনবিশিষ্ট এই সেতুর চার লেনে দ্রুতগতির ভারী যানবাহন এবং নির্ধারিত দুই লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ স্বল্পগতির ছোট যানবাহন। দুপাশে রেলিং ঘেঁষে মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত রাখায় পায়ে হেঁটেও পার হওয়া যাবে এই সেতু। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরের বাসিন্দারা।

সেতুটির ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নামিস ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমরা সেতুটি দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীর নামে সেতুটির নামকরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে, আজকে তিনি (নাসিম ওসমান) নেই। তিনি থাকলে অনেক খুশি হতেন। এই সেতুটি তার স্বপ্ন ছিল।’

পারভীন ওসমান বলেন, ‘চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এই নেতা জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জীবনের শেষ বক্তব্যেও বলেছিলেন এবার শীতলক্ষ্যা সেতু করতে না পারলে আর নির্বাচন করবেন না। মহান আল্লাহ তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। নিশ্চয়ই তার আত্মা শান্তি পাবে।’

রবিবার (৯ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেতুর দুপাশে রঙ বেরঙের পতাকা লাগিয়ে সাজানো হয়েছে। সেতুর মূল কাজ শেষ হলেও রোড মার্কিং, অ্যাপ্রোচ রোড ও মাইনর ওয়ার্কসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে।

এ ব্যাপারে সেতুর প্রকল্প প্রকৌশলী মো. ওসমান গণি সময় সংবাদকে জানান, উদ্বোধনের পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হলেও এই কাজগুলো চলমান থাকবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার ব্যপারে তিনি আশাবাদী।

২০২০ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে বিদেশ থেকে নির্মাণ সরঞ্জাম সঠিক সময়ে না পৌঁছালে দুই বছর পিছিয়ে যায়। এই সেতুর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগের দূরত্ব অনেক কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদচিত্র ডটকম/নারায়ণগঞ্জ

প্রিন্ট করুন