প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ । ৭:৪৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

চিত্রনায়ক ফারুকের জন্মদিন আজ

রেজাউল করিম রেজা

দেশীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা নন্দিত চিত্রনায়ক ফারুকের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পারিবারিক নাম আকবর হোসেন পাঠান ওরফে দুলু। তার বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারুক সবার ছোট। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়।
ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারুক। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন।

লাঠিয়াল সিনেমায় ববিতা ও রোজির সঙ্গে
ফারুককে তাঁর ভক্ত, শুভাকাঙ্খী ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষজন মিয়া ভাই বলে সম্বোধন করেন। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে নারকীয় হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর, শোকের এই মাসে নিজের জন্মদিন পালন করেন না।

সারেং বউ সিনেমায় কবরীর সঙ্গে
ফারুক স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন করেন। তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে কবরী অভিনয় করেন। এর পরে তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দু’টি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।

লাল কাজল সিনেমায় শাবানার সঙ্গে
১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ দু’টি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সে বছর লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

এরপরে ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত তিনটি ছায়াছবি ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’ ও ‘নয়নমনি’। চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র দু’টি নারীকেন্দ্রিক হলেও ফারুকের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।

১৯৭৯ সালে তার অভিনীত ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’ চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়। ১৯৮০ সালে ‘সখী তুমি কার’ চলচ্চিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক একজন ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

জনতা এক্সপ্রেস সিনেমায় রোজিনার সঙ্গে
ফারুক দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভোগছেন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে এক মাস ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ৩০শে আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান ও সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসলেও ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।

বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এখন তিনি কেবিনে আছেন। খাওয়াদাওয়াও করতে পারছেন স্বাভাবিকভাবে।

সংবাদচিত্র/জন্মদিন

প্রিন্ট করুন