প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২ । ৮:১৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

টিপুকে হত্যা করতে খুব কাছ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি

সংবাদচিত্র রিপোর্ট

মাত্র দুই থেকে তিন ফুট দূরত্ব থেকে কমপক্ষে ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে।

তাঁর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে টিটুকে টেলিফোন করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। তবে সে বিষয়ে কোন জিডি বা মৌখিকভাবে পুলিশকে তখন জানানো হয়নি।

ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, যানজটের মধ্যেই হেলমেট পরা একজন ব্যক্তি ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে একটি মাইক্রোবাসের সামনের আসনে বসা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে রাস্তা পেরিয়ে চলে যায়।

সেই সময় পিছনের আসনে বসা ছিলেন মেরাজ ও আবুল কালাম নামে দু’জন। টিপুর বন্ধু মেরাজ জানান, মতিঝিল এজিবি কলোনির ‘গ্র্যান্ড সুলতান রেস্তোরাঁ’ থেকে টিপু, গাড়ির চালক, তিনি ও তাদের একজন ‘সিনিয়র ভাই’ রওনা দেন।

নিহত টিপু সামনে গাড়ির চালকের পাশে বসে। মেরাজ আর সিনিয়র ভাই কালাম পেছনের সিটে ছিলেন। শাহজাহানপুরের সড়কের মানামা ভবনের সামনে আসার পর সামনে এবং ডানে-বায়ে রিকশায় যানজটে পড়ে গাড়ি। ওই অবস্থায় অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সময় হেলমেট পরা এক যুবক এসে টিপু যে পাশে বসেছিল, সেদিক দিয়ে এসে গুলি করতে শুরু করে। গাড়ির জানালা বন্ধ থাকলেও, বুলেটের আঘাতে গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ সময় গাড়ির আশপাশে হেঁটে চলা মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।

মেরাজ আরো জানান, বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ার পর হামলাকারী দ্রুত সড়ক পেরিয়ে অপর পাশের সড়কে চলে যায়। গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়েছিলো টিপুকে। তারপর ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয় তাদের।

ওই এলাকার একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, মাইক্রোবাসে চালকের পাশের সিটে ছিলেন টিপু। গাড়িটি এজিবি কলোনি থেকে খিলগাঁও রেলগেইটের দিকে যাচ্ছিলো।

ইসলামী ব্যাংকের উত্তর শাহজাহানপুর শাখার সামনে গাড়িটি যানজটে পড়তেই একজন কাছ থেকে গাড়িতে গুলি চালায়। এরপর আততায়ী সড়ক ডিভাইডার টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষমান মোটরসাইকেলে গিয়ে ওঠেন।

ঘটনাস্থল থেকে ১২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর, টিটুর শরীরে মিলেছে ১০টি গুলির চিহ্ন। পুলিশ বলছে, হত্যাকারী অস্ত্র চালনায় খুবই দক্ষ ও পেশাদার।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল আহাদ শুক্রবার (২৫ মার্চ) সাংবাদিকদের জানান, মামলায় সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলমান রয়েছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি পুলিশকে জানিয়েছেন, টিপুকে কয়েকদিন টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। তবে তারা সে সময় তা পুলিশকে জানাননি। হুমকি পাওয়ার চার থেকে পাঁচ দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন টিপু।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নিহতের বাসায় এসে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি ঈদগাহ মাঠে টিপুর প্রথম জানাজায় অংশ নিয়ে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, খুনিকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

পরে মেয়র শেখ তাপস প্রয়াত জাহিদুল ইসলাম টিপুর শাহজাহানপুর ঝিলবাগিচা এলাকার বাসায় যান। নিহতের স্ত্রী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি, তার ছেলে-মেয়েসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি জানান।

নিহতের পরিবার জানিয়েছেন, ঢাকায় জানাজা শেষে টিপুর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে নেওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সংবাদচিত্র/অপরাধ

প্রিন্ট করুন