সামাজিক চলচ্চিত্রের বাণিজ্য সফল ও নন্দিত নির্মাতা দীলিপ বিশ্বাস-এর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের ১২ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, চিত্রপরিচালক ও প্রযোজক দীলিপ বিশ্বাস ১৯৪২ সালের ৪ ডিসেম্বর, পিরোজপুরের চাঁদকাঠি গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
একসময় প্যারোডি গানের জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে পরিচিত ছিল দীলিপ বিশ্বাস। প্যারোডি গানের লং প্লে ডিস্কও বেরিয়েছিল তাঁর। চলচ্চিত্রে আগমন কন্ঠশিল্পী হিসেবে, জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবির মাধ্যমে, ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৬৬ সালে। বেহুলা ছাড়াও তিনি আনোয়ারা, মোমের আলো, দুই ভাই, আলোমতি, সন্তান, চেনা অচেনা’সহ বেশকিছু সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন।
এরপর ক্রমান্বয়ে তিনি অভিনেতা, সহকারী পরিচালক, পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথমে তিনি ‘হাবুর বিয়ে’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যদিও ছবিটি মুক্তি পায়নি। দীলিপ বিশ্বাস অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে দুই ভাই, আনোয়ারা, মোমের আলো, সন্তান, চেনা অচেনা, আদর্শ ছাপাখানা, বিনিময়, রংবাজ, সমাধান, জোকার, অবাক পৃথিবী, এখনই সময়, স্বীকৃতি, চাবুক, সুরুজ মিঞা, ইত্যাদি।
তাঁর পরিচালনায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র সমাধি, মুক্তিপায় ১৯৭৬ সালে। আরো যেসব চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করেছেন: বন্ধু, আসামী, অনুরোধ, দাবী, আনারকলি, জিঞ্জির, অংশীদার, অপমান, অস্বীকার, অপেক্ষা, অকৃতজ্ঞ, অজান্তে এবং মায়ের মর্যাদা।
ভারতের কলকাতায় গিয়েও তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। ‘আমার মা’, ‘আমাদের সংসার’ এবং ‘অকৃতজ্ঞ’ তিনটি চলচ্চিত্র ওপার বাংলায় নির্মিত।
‘দাবী’ ছবির অংশিদার প্রযোজক হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা ‘গীতি চিত্রকথা’। তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে- অংশীদার, অপমান, অস্বীকার, অপেক্ষা, দখল, সাত রাজার ধন, অকৃতজ্ঞ, অজান্তে, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, মায়ের মর্যাদা। এগুলো দর্শকসমাদৃত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত।
দীলিপ বিশ্বাস দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। অপেক্ষা ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে এবং অজান্তে ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে এই পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
সামাজিক ছবির বাণিজ্য সফল নির্মাতাদের অন্যতম একজন ছিলেন দীলিপ বিশ্বাস। তাঁর ছবিতে জমজমাট নাটকীয় কাহিনীর সকল ধরণের রসদ বিদ্যমান থাকত। একের পর এক দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। সিনেমা দর্শকদের পছন্দের সৃজনশীল চিত্রনির্মাতা ছিলেন তিনি। এক সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সোশ্যাল সিনেমার মাস্টার মেকার হিসেবে অবিহিত ছিলেন দিলীপ বিশ্বাস।
সামাজিক কাহিনীর বাণিজ্যিক নির্মাতা হিসেবে নিজস্ব একটি ধারার প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে অতি বিনয়ী, ভদ্র লোক ও ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন স্টার মেকার দিলীপ বিশ্বাস। হিট-সুপারহিট চলচ্চিত্র নির্মাণের কীর্তিমান এই কারিগর চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন সিনেমা দর্শকদের কাছে তথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে।
গুণি নির্মাতা দীলিপ বিশ্বাস-এর স্মৃতির প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
সংবাদচিত্র/বিনোদন