মহাকাশে স্থাপন হবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা সোলার স্যাটেলাইট। সেখানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা প্রতিফলনের মাধ্যমে পাঠানো হবে পৃথিবীতে। এতেই মিটে যাবে বিশ্বের জ্বালানির সব চাহিদা।
না, কোনো সাইন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর গল্প নয় এটি। আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ পৃথিবীতে এমন দৃশ্য দেখবে মানুষ। ব্রিটেনের স্পেস এনার্জি ইনিশিয়েটিভ বা এসইআই-এর কো-চেয়ারম্যান মার্টিন সোলটাউ জানাচ্ছেন এমনই আশাবাদ।
বর্তমানে ক্যাসিওপিয়া নামের এমন একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে এসইআই। মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে তারা। মহাকাশে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পৃথিবীতে তা প্রতিফলনের মাধ্যমে পাঠাবে এসব কৃত্রিম উপগ্রহ।
সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সম্ভাবনা মহাশূন্যের মতোই অসীম বলে প্রত্যাশা মার্টিন সোলটাউয়ের। তার ধারণা এর মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রয়োজনীয় জ্বালানির প্রায় সবটুকুই সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, মহাশূন্যে পৃথিবীর কক্ষপথে এসব সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী স্যাটেলাইটগুলো স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সূর্যের অফুরন্ত তাপ। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জ্বালানির চাহিদার শতগুণ বেশি যোগান দিতে পারবে মহাকাশে স্থাপিত এই সোলার স্যাটেলাইটগুলো।
বিষয়টিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। চলতি বছর মহাকাশ থেকে জ্বালানি উৎপাদন সংক্রান্ত স্পেস বেসড সোলার পাওয়ার বা এসবিএসপি প্রকল্পে তিন মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা দিয়েছে তারা। এসইআই বর্তমানে এই তহবিল থেকে মোটা অঙ্কের সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
মহাকাশে অসংখ্য ছোট ছোট সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এসইআই। যেগুলো তৈরি হবে পৃথিবীতে অবস্থিত কারখানায়। তবে মহাকাশে এগুলোকে স্থাপন এবং এর মেরামতের কাজগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হবে স্বয়ংক্রিয় রোবটের ওপর।
মহাকাশে স্থাপিত এসব সোলার প্যানেলগুলোতে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎকে উচ্চমাত্রার বেতার তরঙ্গে রূপান্তরিত করে পৃথিবীর দিকে প্রতিফলিত করা হবে। যা ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত অ্যান্টেনার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। পরে এই বেতার তরঙ্গগুলোকে পুনরায় বিদ্যুতে রূপান্তর করা হবে।
এর মাধ্যমে প্রতিটি সোলার স্যাটেলাইট দুই হাজার মেগাওয়াট বা একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে জানা গেছে।
সাধারণত পৃথিবীতে প্রবেশের পর বায়ুমণ্ডলের বাধার কারণে সূর্যের তাপ শক্তি ব্যাপক হ্রাস পায়। কিন্তু বাতাস না থাকায় পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছাতে সূর্যের তাপের কোন সমস্যা হয় না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে স্থাপিত একই আকৃতির একটি সোলার প্যানেল থেকে মহাশূন্যে স্থাপিত একটি সোলার প্যানেল বহুগুণ বেশি তাপ গ্রহণ করতে পারে।
এদিকে শুধু ব্রিটেনেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও একই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে সেখানকার এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি বা এএফআরএল।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সঙ্কটের মাঝে নিঃসন্দেহে আশার আলো জাগিয়েছে এই প্রযুক্তি। তবে এর বাস্তবায়ন কবে নাগাদ হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সংবাদচিত্র ডটকম/বিদ্যুৎ ও জ্বালানি