বাজেট বরাদ্দের সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সব থেকে বড় অভিযোগ এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় না। কিন্তু অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। স্বাস্থ্যখাতের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পিডিদের যথাযথ ধারণা না থাকায় স্বাস্থ্য খাতে যে টাকা দেয়া হয়, তার পুরোটা খরচ হয় না বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সরকারকে অব্যবহৃত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে বলে জানা যায়।
সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিল স্বাস্থ্যখাত
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে খরচ করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত গেছে। করোনা অতিমারির মধ্যে টিকা, ভেন্টিলেটর, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। তারা খরচ করতে পেরেছে ৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ আছে-স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগকে ১ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ খরচ করতে পেরেছে ৬ হাজার ৯৩৮ কোটি বা ৫৭ শতাংশ টাকা। অর্থাৎ বিভাগটি অর্ধেকের চেয়ে সামান্য বেশি অর্থ খরচের সক্ষমতা দেখিয়েছে। বাকি ৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা খরচ করতে না পারায় ফেরত গেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ ১ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে খরচ করতে পেরেছে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। খরচ করতে না পারায় বাকি ৩২৮ কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছে।
একদিকে বরাদ্দের অর্থ পুরোপুরি খরচ হয় না, অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে ব্যবস্থাপনার দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, করোনার কারণে বিদেশ থেকে নির্ধারিত সময়ে অনেক যন্ত্রপাতি আনা সম্ভব হয়নি। বছরজুড়ে চিকিৎসকদেরও মনোযোগ ছিল করোনা চিকিৎসায়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমেছে। তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে বেশি টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত টাকা খরচ না হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে। বলা হচ্ছে, এই খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ পান চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাঁদের দিনের বড় একটা সময় চলে যায় রোগী দেখতে। রোগী ও প্রকল্প পরিচালনা দুটি কাজ একসঙ্গে করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কাজে ব্যাঘাত ঘটে। টাকা খরচ করে ফেললে নিরীক্ষার সময় আবার ঝামেলায় পড়তে হয় কি না, সেই ভয়ও কাজ করে চিকিৎসকদের মধ্যে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কেনাকাটাসংক্রান্ত নিয়মকানুন সম্পর্কেও তাঁদের তেমন ধারণা থাকে না। বিশেষ করে ভারতীয় ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোতে সেই দেশের শর্ত মানতে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ ও ঠিকাদার নিয়োগের জটিলতাও আছে।
সংবাদচিত্র/স্বাস্থ্য