ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোর পদক্ষেপ হিসেবে গত রোববার এক কোটি পরিবারের কাছে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে এসব কার্ড দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। অস্থির বাজার পরিস্থিতি ও কম দামে পণ্য পেতে ট্রাকের পেছনে দৌড়ানো নিম্ন আয়ের মানুষের অসহায়ত্বের মধ্যে এমন ঘোষণা ছিল ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা তখন প্রথম আলোর এক সম্পাদকীয়তে উঠে আসে। তবে সেখানে এ–ও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, প্রকৃতভাবে অসচ্ছল ও অভাবী পরিবারের এক কোটি তালিকা কীভাবে তৈরি করা হবে, সেটিই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সারা দেশে বিতরণকৃত কার্ডের বিপরীতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রথম দফার পণ্য পাচ্ছে মানুষ। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে অনেক জায়গায় আমাদের সেই আশঙ্কার প্রতিচিত্রই উঠে এসেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোগান্তিও।
বাজারের চেয়ে কম দামে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ পেয়ে খুশি মানুষ। তবে বরাদ্দ অনুসারে কম কার্ড বিতরণ, দেরিতে টিসিবির ট্রাক আসা, মানুষের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে দৌড়ানো, কার্ড নিয়েও পণ্য না পেয়ে অনেকের খালি হাতে ফেরত যাওয়া—এমন সব ভোগান্তির চিত্র দেখা যায় অনেক জেলায়। দেরিতে পণ্য বিক্রি করায় মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। কম দামে পণ্য কিনতে গিয়ে কাজে যোগ দিতে না পেরে পুরো দিনের মজুরিই হারাতে হচ্ছে অনেককে। এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির কাছে এবং অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারকে কার্ড বিতরণের মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগও আছে। ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের বঞ্চিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, কার্ড তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাঁদের অনুসারী ও পছন্দের লোকদের কার্ড দিয়েছেন।
এ ছাড়া টিসিবি এত দিন যে পণ্য বিক্রি করেছে, সেখানে সবার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। এখন রাজধানী ছাড়া অন্য জেলায় শুধু কার্ডধারীদের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাকিদের সুযোগ থাকল না। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, করোনাকালে আয় কমা ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে ছয় থেকে সাত কোটি নিম্নবিত্ত এখন কষ্টে রয়েছে। ফলে আরও মানুষকে সহায়তার আওতায় আনতে কার্ডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার সুযোগও চালু রাখা যায় কি না, সেই বিবেচনা করা দরকার। দ্বিতীয় দফা পণ্য বিক্রিতে রোজা উপলক্ষে যুক্ত হবে কম দামে ছোলাও, তবে চালও বিক্রির দাবি জানিয়েছে মানুষ। ভোজ্যতেলের মতো সাশ্রয়ী মূল্যে চাল বিক্রির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে পারে সরকার।
বাজারে অনিয়ম রুখতে নজরদারি বাড়ানো ও অভিযান চালানো, কিছু পণ্যে ভ্যাট কমানোসহ সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তি ফেরা শুরু করেছে। তবে সামনের রমজান মাসকে ঘিরে এখনো আশঙ্কামুক্ত হতে পারছে না ভোক্তারা। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারি বন্ধ করতে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রয় সফল করতেই হবে। ভোগান্তি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তৎপর না হলে ভোক্তারা কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। এর আগে করোনাকালীন সহায়তাসহ নানা ত্রাণ কার্যক্রম সঠিক তদারকির অভাবে ও অনিয়মের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আবারও তেমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আমরা দেখতে চাই না।
সংবাদচিত্র/সম্পাদকীয়