রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) উৎপাদন প্রস্তুতি সনদে সই করেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। এই প্রটোকল সইয়ের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে আরেক ধাপ এগোলো বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী অক্টোবরে জ্বালানির প্রথম চালান বাংলাদেশে আসবে।
আজ শুক্রবার রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের রাজধানী নভোসিভিরস্ক শহরে এই সনদ সই হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিভিইএল ফুয়েল কোম্পানির দপ্তরে এ প্রটোকল সই হয়। প্রটোকলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো শৌকত আকবর ও রাশিয়ার পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ভি ডায়েরি।
রূপপুরের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করছে টিভিইএল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিভিইএল পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম রড) বিক্রি করে।
প্রটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত রূপপুর প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে স্বাক্ষরিত সাধারণ চুক্তি অনুসারে রাশিয়া প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে। বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম দিন হতে পরবর্তী তিন বছর দেশটি এই জ্বালানির জন্য কোনো অর্থ নেবে না। উৎপাদন প্রস্তুতি সনদে স্বাক্ষরের ফলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) গাইডলাইন অনুযায়ী ফুয়েল উৎপাদনের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না।
সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি সইয়ের পর এখন পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন শুরু হবে। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে এই জ্বালানি দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পারমাণবিক এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না। আইএইএর নির্দেশনা মেনেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বরে উদ্বোধনের পর ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। যন্ত্রপাতি আমদানিও বাধাগ্রস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে সম্প্রতি রূপপুরের যন্ত্রপাতি নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা একটি জাহাজ ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া গত ১২ এপ্রিল রাশিয়ার ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রোসাটমের সংশ্লিষ্ট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাটির বিদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট ইভজেনি পাকেরমানভের নামও আছে। তবে রূপপুর কর্তৃপক্ষ ও রোসাটম বলছে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। কারণ, অধিকাংশ যন্ত্রপাতি দেশে চলে এসেছে। কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি প্রক্রিয়াধীন। জুনের মধ্যে সব পূর্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে। ভারী যন্ত্রপাতি সংস্থাপন শেষে এখন চলছে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই রূপপুর উৎপাদনে আসবে।
কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর।
সংবাদচিত্র ডটকম/বিদ্যুৎ