খেলোয়াড় ও ক্রীড়ানুরাগীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি। সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে। খেলার মাঠেও মাথায় রাখতে হবে। যুদ্ধে জয়ী হয়েছি, খেলাও জয় করব। এই চিন্তা নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে।’
আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা হিসেবে খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ ও কর্মকর্তাদের দুই লাখ টাকার চেক প্রদান করেন সরকারপ্রধান।
মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও প্রশিক্ষণ—এ তিনটি বিষয় খেলার জন্য একান্ত দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণকে কখনো শিথিল করা যাবে না। যত বেশি প্রশিক্ষণ হবে, তত বেশি খেলাধুলায় উৎকর্ষতা পাওয়া যাবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। আমাদের লক্ষ্য তৃণমূল থেকে উন্নয়ন। সরকার গঠনের পর থেকেই সেই প্রচেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই উন্নয়নটা শহরকেন্দ্রিক যেন না হয়। গ্রাম পর্যায়ে যেন উন্নয়নটা হয়। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা একান্তভাবে দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা যত বেশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে, তত বেশি তাদের মধ্যে আলাদা মানসিকতা ও দেশপ্রেম গড়ে উঠবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খেলাধুলার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফি পায়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বিশ্বকে অবাক করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত আবার ক্ষমতায় এলে ক্রীড়াঙ্গনে আবারও কলঙ্কজনক অধ্যায় চলে আসে।’
সরকার ছেলে ও মেয়ে ফুটবলারদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা এভাবে বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে এটা হয়তো কেউ ভাবেওনি। আমি মনে করি, যত বেশি প্রশিক্ষণ হবে, তত বেশি উৎকর্ষতা পাবে।’
‘সবার জন্য ক্রীড়া’ এই নীতি বিশ্বাস করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলায় শারীরিক চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে অটিস্টিক যারা, তারা পিছিয়ে থাকবে কেন? আমরা তাদেরও খেলাধুলায় উৎসাহিত করছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ অলিম্পিকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের পাঠাই। সেসময় তারা বাংলাদেশের জন্য ২১টি পদক নিয়ে আসে। বিশেষ অলিম্পিকে অংশ নিয়ে তারা এ পর্যন্ত ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে। আমাদের প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলও কিন্তু ভালো করছে। তারা বিদেশে আটটি টুর্নমেন্টে অংশ নিয়ে সবগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
এ সময় হাসির ছলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমাদের ছেলেরা যা পারে না, আমাদের মেয়েরা তার থেকে বেশি পারে। শুনলে আবার ছেলেরা রাগ করবে। রাগ করার কিছু নেই। ছেলেদের প্রতিযোগিতাটা একটু বেশি।’
প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় অনুষ্ঠানস্থলে হাসির রোল পড়ে যায়। করতালিও হয়।
সংবাদচিত্র ডটকম/জাতীয়