বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সাকিব-ইবাদতের দাপুটে বোলিংয়ে ভারতের করা ১৮৬ রানের জবাবে মিরাজের ব্যাটে ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় পেলে বাংলাদেশ। ২৪ বল বাকি থাকতেই জয় পেল বাংলাদেশ। শেষ মেহেদী মিরাজ-মুস্তাফিজের ৫০ রানের জুটিতে জয় পেল বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে টপ অর্ডার এবং মিডেল অর্ডার ভালো না করেতে পারলেও মেহেদী মিরাজের ব্যাটে জয়ের রমাঞ্চ জাগিয়েছে বাংলাদেশকে।
ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই নাজমুল হোসেনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বল, সেটিতেই একমাত্র স্লিপে ক্যাচ দেয় নাজমুল হোসেন। দীপক চাহার ভারতকে ব্রেকথ্রু এনে দিলেন একেবারে শুরুতেই। নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ক্রিজে সঙ্গী হন লিটন দাস। এক বল পর বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন এনামুল হক। চাহারের প্রথম ওভারে আসে ৫ রান।
প্রথম বলেই নাজমুল ফেরার পর বেশ সতর্ক ব্যাটিং করেন লিটন ও নাজমুল। মুখোমুখি ২১তম বলে এসে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় লিটন দাস। ভারত পেসাররাও করছেন আঁটসাঁট বোলিং।
ব্যক্তিগত ১৩ রানে নবম ওভারে আম্পায়ারের দেওয়া এলবিডব্লিউ থেকে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এনামুল হক। তবে ইনিংস বড় করতে পারলেন না তিনি। পরের ওভারে আর বাঁচলেন না। মোহাম্মদ সিরাজের আপাত সাদামাটা এক ডেলিভারিতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ২৯ বলে দুই চারে ১৪ রান করেন এনামুল। ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ২ উইকেটে ৩০। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী হয়ে আসেন সাকিব আল হাসান।
লিটন-সাকিব জুটিতে বেশ দেখে বুঝেই আগাচ্ছিল বাংলাদেশ। শুরুতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না লিটন দাস। পরে ধীরে ধীরে ফেরেন ছন্দে। মারেন চমৎকার কিছু বাউন্ডারি। থিতু হয়ে যাওয়া এই ওপেনারকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ভাঙে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার ৬১ বল স্থায়ী ৪৮ রানের ইনিংস। ৬৩ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে লিটন করেন ৪১ রান। আরেকটি ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন লিটন।
২০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৭৭। ক্রিজে সাকিবের সঙ্গী তখন মুশফিকুর রহিম।
লিটন ফেরার পরে সাকিবও টিকলেন না বেশিক্ষণ। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে সাকিব আল হাসানকে বিদায় করলেন বিরাট কোহলি। লিটন দাসের পর বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ।
এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে ড্রাইভ করেছিলেন সাকিব। মাঝ পথে লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নিয়ে তাকে থামান কোহলি।
৩৮ বলে তিন চারে ২৯ রান করেন সাকিব। ২৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৯৭। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।
ধীরে এগোনো জুটি ভাঙলেন শার্দুল ঠাকুর। এলবিডব্লিউ করে দিলেন মাহমুদউল্লাহকে। ৩৫ বলে ১৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১২৮। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী আফিফ হোসেন।
পরপর দুই বলে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে হারাল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর নতুন ওভারের প্রথম বলে মুশফিকুর রহিমকে বোল্ড করে দিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৪৫ বলে মুশফিক করেন ১৮ রান।
৩৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১২৮। ক্রিজে আফিফ হোসেনের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
অভিষিক্ত পেসার কুলদিপ সেনকে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দেন আফিফ। তালগোল পাকালেও শেষ পর্যন্ত মুঠোয় রাখতে পারেন মোহাম্মদ সিরাজ। প্রথম উইকেটের স্বাদ পান কুলদিপ। ১২ বলে ৬ রান করেন আফিফ।
এরপরে এবাদত, হাসান মাহমুদ ক্রিজে দাঁড়াতেই পারেনি। ক্রিজে মুস্তাফিজের সঙ্গী হয়ে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরআগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।পাঁচে নামা রাহুল ৭৩ রান করেন ৭০ বলে, ভারত ইনিংসে পরের সর্বোচ্চ ইনিংসটি রোহিতের ৩১ বলে ২৭ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে আরেকটি পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন বাঁহাতি এই স্পিনার সাকিব। ওয়ানডেতে এনিয়ে চতুর্থবার পাঁচ উইকেট নিলেন সাকিব। সাকিব ৫ উইকেট নিয়েছেন ৩৬ রানে। বিশ্বের সপ্তম স্পিনার হিসেবে এই সংস্করণে চার বা তার বেশি পাঁচ শিকার ধরলেন তিনি।
উইকেট না পেলেও বেশ মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন মোস্তাফিজুর, ৭ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৯ রান। ইবাদত ৪ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৪৭ রান। মিরাজের ১ উইকেট এসেছে ৪৩ রানের বিনিময়ে।
তামিমের ইনজুরিতে ওয়ানডে সিরিজের অধিনায়কত্বের ভার লিটন দাসের। হাসান, মুস্তাফিজ ও এবাদতের পেস আক্রমণ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন ক্যাপ্টেন। তার ফলও দিয়েছে বোল হাতে সাকিব-ইবাদত-ফিজরা। তবে হতাশ করেছে আবারও ব্যাটিং। অভিজ্ঞ সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আশা জাগিয়েও জয় নিয়ে ফিরতে পারেনি। তবে জয়টা নিয়ে ফিরেছেন মিরাজ- মুস্তাফিজ।
এর আগে ভারতে বিপক্ষে পাওয়া পাঁচ জয়ের চারটাই টাইগারদের ঘরের মাঠে। তবে ৩৬ ম্যাচের মুখোমুখিতে ৩০টাতে জয় ভারতের।
সংবাদচিত্র ডটকম/ক্রিকেট