বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে এক যুগ হলো। এরপর বাবা বিয়ে করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু মায়ের আর সেই অর্থে সংসার করা হয়ে ওঠেনি। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মা মুস্তারি পারভীন আর বিয়ে করেননি।
কিন্তু তার সন্তানরা বড় হয়ে মায়ের বিয়ে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। সেই ভাবনা থেকেই মায়ের অনুমতি নিয়ে তার জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তারা। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে।
মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ফারাহ জামান। রাজধানীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেছেন তিনি। তার বড় ভাই রেহমান মুশফিক এ-লেভেল সম্পন্ন করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
ফারাহ-মুশফিকের বাবা-মায়ের বিয়ে হয় ১৯৯৬ সালে। ৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ককে পরিণতি দিয়ে বিয়ে করেন তাদের বাবা-মা। কিন্তু ২০১০ সালে ১৪ বছরের সংসারে হঠাৎ বিচ্ছেদের সুর বেজে ওঠে। এরপর মুস্তারি পারভীন একা হাতে দুই সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্ব নেন।
ফারাহ-মুশফিকের মায়ের বয়স এখন ৪৫ বছর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মুস্তারি পারভীন গত ১০ বছর ধরে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। তার মেয়েও পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর বিদেশে চলে গেলে তাদের মা আরও একা হয়ে পড়বেন।
মায়ের এই একাকিত্বের কথা ভেবে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে ‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন ফারাহ।
মায়ের চারটি ছবিসহ ফারাহ তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমার আম্মুর জন্য পাত্র খুঁজছি।’
মায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যে ফারাহ জানান, ‘পাত্রীর নাম মুস্তারি পারভীন। জন্ম ১৯৭৭ সালে। উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, ওজন ৫৮ কেজি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। স্থায়ী ঠিকানা: দিনাজপুর, বর্তমান ঠিকানা: মিরপুর। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক।’
ফারাহ তার পোস্টে আরও লিখেন, ‘আমার মা একজন ডিভোর্সী নারী। ডিভোর্সের ১২ বছর হতে যাচ্ছে। তার ২২ বছরের একটি ছেলে এবং ১৮ বছরের একটি মেয়ে আছে। এতদিন বাচ্চাদের জন্য বিয়ে করা হয়নি। এখন তার বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে। তাই আম্মুর একজন জীবনসঙ্গী দরকার। আম্মুর জন্য ভালো মনের একজন জীবনসঙ্গী খুঁজছি।’
মায়ের জন্য কেমন পাত্র চান, সেটাও পোস্টে জানিয়ে দিয়েছেন ফারাহ। তিনি লিখেছেন, ‘পাত্রের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে হলে ভালো হয়। পাত্রকে শিক্ষিত, ভালো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যবসায়ী অথবা চাকরিজীবী হতে হবে। পাত্র যেন অবশ্যই ঢাকার মধ্যে বসবাস করে। কেউ আগ্রহী হলে আমাকে ইনবক্স করুন।’
ফারাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়া ইতোমধ্যেই কানাডার ভিসা পেয়ে গেছে। গত মাসে সে চলে গেছে। সম্প্রতি আমারও ভিসা এসেছে। আমিও হয়তো সেপ্টেম্বরের দিকে যাবো। আমি চলে গেলে আম্মু একদম একা হয়ে যাবে। এজন্য আম্মুর জন্য একজন জীবনসঙ্গী খুঁজছি। আম্মু আমাদের জন্য সারাজীবন কষ্ট করে গেছে। এখন আমরা চাইলেও তার সঙ্গে থাকতে পারছি না। পড়াশোনার তাগিদে আমাদের দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। এজন্য আম্মুকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। এরপর আম্মুও রাজি হয়েছে। আম্মুর অনুমতি নিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
সংবাদচিত্র/লাইফস্টাইল