সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কালাগড় গ্রাম হয়ে মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহিষখলা নদী ওপর নির্মিত সেতুটি বদলে দিয়েছে লাখো মানুষের ভাগ্য। সীমান্তবর্তী এ জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত।
নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপদ সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ১৬ কোটি টাকার অর্থায়নে ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মাণের কাজটি পায় মোজাহের এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
সেতুর পূর্বপাড়ে জেলার মধ্যনগর উপজেলা, পশ্চিম পাড়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়ন। সেতুটি সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা জেলার সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল শুরু করেছে ঢাকাগামী বাস ও ট্রাকসহ সব যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কালাগড় থেকে এই সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ ও মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ, বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের লাখো মানুষের যোগাযোগব্যবস্থাও সহজ হয়েছে এই সেতুর মাধ্যমে।
এ সেতুর উপকারভোগী সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের প্রধান উৎস কৃষি। এতদিন যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজারদরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতেন। এখন কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করতে পারছেন।
ঢাকাগামী বাসের যাত্রী উপজেলার কালাগড় গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আগে ঢাকা যাইতে হইলে বাড়তি দেড় শ-দুই শ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশায় কলমাকান্দা বা নেত্রকোনা সদরে যাইতাম। এখন আমরা গ্রাম থেকেই বাসে উঠে সরাসরি ঢাকা যেতে পারছি। খরচও কমছে, কষ্টও কমছে।’
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, মহিষখলা নদীতে সেতু নির্মিত হওয়ায় উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণ কম সময়ে, স্বল্প খরচে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারছেন। পণ্য সরবরাহেও সুবিধা হয়েছে। এর সঙ্গে বর্ডার রোডে কলাগাঁও থেকে বাগলী পর্যন্ত রাস্তায় এক কিলোমিটার পাকা করলে এলাকায় মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় আর দুর্ভোগ থাকবে না।
বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, পণ্যবাহী যানবাহনসহ ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সহজ হলো এবং খরচও কমেছে। এতে এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্রুত উন্নত হবে।
মধ্যনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় সওজের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি হাওরবেষ্টিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। সীমান্তবর্তী জনপদের জন্য যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রুহুল আমিন খান বলেন, প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকায় জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়নি। সীমান্তবর্তী জনপদের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সেতুটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদচিত্র ডটকম/সারাদেশ