‘২০১৪-২০১৫ সেশনে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, একটি বিষয়ে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় পরেরবার আবার ওই বিষয়ে পরীক্ষা দিই। সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ রেজাল্ট আসে, কিন্তু রেজাল্টের ঘর ফাঁকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ গেলে বলে আগামী সপ্তাহে আসেন। পরের সপ্তাহে গেলে আবার তারপরের সপ্তাহে যেতে বলে। একটা রেজাল্টের জন্য তারা আর কতো সময় নেবে।’ পরীক্ষা দিয়েও ফলাফল না পাওয়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা রুমি।
শুধু রুমিই নন, এমন ভোগান্তি সাত কলেজের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর নিত্যসংগী। প্রশ্ন কিংবা ফলাফল- সবখানেই ভুলের সমারোহ। ভুল শুধরাতে জটিলতারও শেষ নেই। ছোটখাট সমস্যা সমাধান করতে কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপেই সময় শেষ হয়ে যায়। করোনার দীর্ঘ বিরতির পর হওয়া পরীক্ষার প্রশ্ন কাঠামো নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেও সমাধান মেলেনি।
ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রবিউল আলম বলছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। কিছু একটা হলেই কলেজ পাঠিয়ে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারাও খুব একটা সহযোগিতা করে না। আমরা খুব বিপদে আছি।’
২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয় ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজকে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এরপর থেকেই সমন্বয়হীনতা জেঁকে বসেছে কলেজগুলোতে। সংকট নিরসনে আন্তরিকতা তো দূরের কথা, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা এ প্রসংগে কথাই বলতে চান না।
এসব প্রসংগে ইডেন মহিলা কলেজে যেয়ে নানানভাবে চেষ্টা করেও অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য-এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহার-এর সংগে কথা বলতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সাত কলেজের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ কথা বলবেন। আমি কথা বলবো না।’ গণমাধ্যমের সংগে কথা বলতে অনুমতি লাগবে জানিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা বলেন, ‘সরকারি চাকরি তো, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যায় না। অনেক রেস্ট্রিকশন আছে।’
সমস্যার মূলে সাত কলেজ পরিচালনায় আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো না থাকার কথা বলছেন ঢাকা কলেজ-এর অধ্যক্ষ এবং সাত কলেজ সমন্বয়ক অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের অধ্যক্ষদের কী ক্ষমতা? অ্যাকাডেমিক কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তারা দেখবে। আমাদের জন্য আলাদা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ করার কথা ছিলো এখনও করা হয়নি। আলাদা একটি ভবনে সাত কলজের জন্য ব্যবস্থা রাখার কথা ছিলো কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। দ্রুত ফলাফল নিশ্চিতকরণ এবং সংকট নিরসনে দীর্ঘদিনেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আরেকটু আন্তরিক হলে সমস্যা সমাধান সহজ হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার সংগে কাজ করছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং সাত কলেজ-এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করছি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান করতে। আমাদের কাছে যখনই কোনো অভিযোগ আসে, তখনই চেষ্টা করছি তা সমাধান করে দিতে। সামগ্রিকভাবে সাত কলেজ এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঠিক সময়ে ফলাফল পাওয়ার অধিকার আছে। সংকট নিরসন করতে না পারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে বিশেষ অনুরোধ করবো। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি প্রশ্ন করুন, কেনো ফলাফল দিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
সংবাদচিত্র/শিক্ষা