নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড-এর কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে ৪৩ জনের মৃতদেহ। বাকি ৯ জনের মৃতদেহ ঘটনাস্থলে আছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রায়হান।
রূপগঞ্জের ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড-এর কারখানার আগুন লাগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট রাত থেকে কাজ করছিল। এখন একটি ইউনিট কাজ করছে।
আজ শুক্রবার (৯ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। কারখানার শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির পঞ্চম তলার একপাশে সেমাই, সেমাই ভাজার তেল, পলিথিন, আরেক পাশে কারখানার গুদাম আছে। ষষ্ঠ তলায় কার্টনের গুদাম, চতুর্থ তলায় ললিপপ, তরল চকোলেট, তৃতীয় তলায় অরগানিক পানীয় (জুস, লাচ্ছি), দোতলায় টোস্ট বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং নিচতলায় বাক্স ও পলিথিন তৈরির কারখানা।
কারখানাটিতে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করলেও আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০ থেকে ১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন বলে মো. আবদুল জলিল ও মো. আবু সামাদ নামের দু’জন শ্রমিক জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগুন নেভানোর জন্য রাতভর অক্লান্ত চেষ্টার পর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন কিছুটা কমে আসে। তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনটির নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত একটি অংশে প্রবেশ করেন। এই সময় সেখানে কিছু পোড়া লাশ খুঁজে পেয়েছেন। তবে লাশের সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে ছয়তলা ভবনটির নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪)। ঘটনাস্থলে তাঁরা মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
কারখানাটির ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লা আল আরেফীন জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (৮ জুলাই) ভোর থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা কারখানা এলাকায় ভিড় করতে শুরু করেছেন। তাঁদের আর্তনাদে কারখানা এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
সংবাদচিত্র/দুর্ঘটনা