খাঁন আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ ছবিতে নবাবের ঘাতক মোহাম্মদী বেগ চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেতা আবদুল মতিন। আজ ১৭ জুলাই মঞ্চ, বেতার, টিভি ও চলচ্চিত্রের বরেণ্য এই অভিনেতার জন্মবার্ষিকী।
অভিনেতা আবদুল মতিন ১৯২১ সালের ১৭জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুর রহমান আর মা বিবি সমীরনের একমাত্র সন্তান তিনি।
১৯৩৫ সাল থেকে নাট্যাভিনয়ে সাধনা ও উন্নয়নে ঢাকার প্রথম মুসলিম অভিনয় শিল্পী। বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জন্মলগ্ন থেকে অভিনয় করেছেন আবদুল মতিন। বেতারের জন্মলগ্ন থেকেই যুক্ত এবং এর উন্নতি বিধানে ঘোষক, নাট্য প্রযোজক, নাট্য লেখক ও সংগীত রচয়িতা হিসেবে কাজ করেছেন।
শুধু তাই নয়, ১৯৫২ সালে বেতারে চাকরি করার সময় ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সম্মানে প্রথম প্রতিবাদকারী ও বেতারে হরতালের আহবায়ক ছিলেন তিনি। বেতারের ২৪ ফেব্রুয়ারি যোগদানের দিনই সরকারী নথি ‘লগবুক’-এ সর্বপ্রথম বাংলা লিখেছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫৬ সালে আমেরিকার মেট্রোগোল্ডেন মায়া (এমজিএম) প্রযোজনা সংস্থার ঢাকায় নির্মিত প্রথম ডকুমেন্টারি ছবিতে অংশগ্রহণকারীও তিনি।
১৯৬২ সালের ১ জুলাই সিলেট বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রধান হিসাবে সিলেট বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান চালক। ৬৯ গণ অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বিক্ষুব্দ শিল্পী সমাজের যুগ্ম মহাসচিব। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্ত্বে অচল ঢাকা বেতারকে সচল করার প্রথম ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের স্বার্থরক্ষণ উন্নয়নে টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ (টেনাশিনাস)-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ও সমিতির গঠনতন্ত্রের রচয়িতা।
অভিনেতা আবদুল মতিন মঞ্চ, বেতার ও টিভি নাটকের পাশাপাশি প্রায় দু’শোর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত সব পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এবং খাঁন আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’।
এছাও তার অভিনীত উলেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ফকির মজনু শাহ, লালন ফকির, জাগোহুয়া সাবেরা,আসামী, লাল সবুজের পালা, নাত বৌ, সাহেব, জিঘাংসা, কুয়াশা,ছদ্মবেশী, মিশর কুমারী, দ্বীপ নিভে নাই, সেতু,অনেক দিন আগে, লাঠিয়াল, চোর, পাগলা রাজা ও বড় ভালোলোক ছিল সহ প্রায় দু’শো চলচ্চিত্র ইত্যাদি। টেলিভিশনে উল্লেখযোগ্য বেগম মমতাজ হোসেনের সকাল সন্ধ্যা ধারাবাহিক নাটকে ‘পরাণ ভাই’ এবং আনোয়ারা ও শুকতারা নাটকে অভিনয় করেন।
প্রসঙ্গত, অভিনেতা আবদুল মতিন ১৯৮৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১৭ই ভাদ্র ইন্তেকাল করেন। আজকের এই বিশেষ দিনে মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র সিনিয়র সাংবাদিক অনজন রহমান তার পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
সংবাদচিত্র/চলচ্চিত্র