মিরপুরে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই দেখল ক্রিকেটপ্রেমীরা। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখলে সিলেট-বরিশালের ম্যাচটি দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। তবে স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে শেষ হাসি হেসেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স। আজ মঙ্গলবার ফরচুন বরিশালকে ২ রানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানও ধরে রাখলো সিলেট।
রান তাড়ায় দারুণ এগোতে থাকা বরিশাল বড় ধাক্কা খায় ১৪তম ওভারে। রেজাউর রহমান রাজা একই ওভারে ফেরান দুই সেট ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান এবং সাকিব আল হাসানকে। দুজনেই ক্লিন বোল্ড হন রাজাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। রাজার ওই ওভারে ম্যাচ হেলে পড়ে সিলেটের দিকে। তবে ১৬তম ওভারে ম্যাচ আবার নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যায় বরিশাল। সিলেট অধিনায়ক মাশরাফির শেষ তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের করে নেন করিম জানাত।
তবে পরের ওভারে ম্যাচ আবার ঝুলে পড়ে সিলেটের দিকে। মোহাম্মদ আমির ওই ওভারে দেন মাত্র ১ রান। আর শেষ বলে তো তুলে নেন সেই করিম জানাতের উইকেট। মহানাটকীয়তার পর শেষ ২ বলে বরিশালকে করতে হতো ১৩ রান। তখন ম্যাচ জয়ের সুযোগ না থাকলেও টাই করে সুপার ওভারে নিতে পারতো বরিশাল। রাজার পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেই সম্ভাবনা জাগান মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তবে রাজার করা শেষ বলে চারের বেশি রান নিতে না পাড়ায় ম্যাচ জিতে নেয় সিলেট।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিলেটকে হটিয়ে চলতি বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে বরিশালের দরকার ছিল ১৭৪ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে বরিশাল পায় উড়ন্ত সূচনা। ওপেনার সাইফ হাসান ঝড় তোলেন মিরপুরে। কোনো চারের মার না থাকলেও, ৪ ছক্কায় ৩১ রান করেন তিনি। তানজিম হাসান সাকিবের বলে ফেরার আগে ১৯ বলে ১৬৩ স্ট্রাইকরেটে এই রান করেন সাইফ।
দলীয় ৪২ রানে প্রথম উইকেট হারানো বরিশাল পাওয়ারপ্লেতে উইকেট হারায় আরও একটি। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে সেই তানজিমের ফুলটাস উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দুরন্ত এক ক্যাচের শিকার হন এনামুল হক বিজয় (৩)। এরপর ইব্রাহিম জাদরানকে নিয়ে বরিশালকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে থাকেন সাকিব। তবে রাজার ওই ওভার ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের দৃশ্যপট। জাদরান ফেরেন ৪২ রান করে। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান।
শেষতক করিম জানাতের ২১, ইফতিখার আহমেদের ১৭ এবং মোহাম্মদ ওয়াসিমের ১০ রান ম্যাচ জমিয়ে তোলে ঠিকই, তবে বরিশালকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দিতে পারেননি। রাজা শেষ ওভারে ইফতিখারকে ফেরানোসহ নিয়েছেন ৩ উইকেট। দারুণ বোলিং করেছেন আমিরও। শেষ দুই ওভারে মাত্র ৯ রান খরচ করে ২ উইকেট নেন তিনি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ ওয়াসিমের তোপের মুখে পড়ে দলীয় ১৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় সিলেট। গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফেরেন জাকির হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা তৌহিদ হৃদয়ও এদিন দাঁড়াতে পারেননি। মাত্র ৪ রান করে আউট হয়ে যান।
এরপর জুটি বাধেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং ইংলিশ ব্যাটার টম মুরস। দুইজন মিলে ৮১ রানের জুটি গড়েন। ৩০ বলে ৪০ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে আউট হয়ে যান মুরস। এরপর থিসারা পেরেরার সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি বাধেন শান্ত। পেরেরা ১৬ বলে করেন ২১ রান। ইমাদ ওয়াসিম উইকেটে নেমে ৫ রান করে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। ৬৬ বলে ৮৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যান শান্ত। ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কার মার ছিলো তার ব্যাটে।
বরিশালের হয়ে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। একটি করে উইকেট পকেটে পোরেন সাকিব আল হাসান ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
সংবাদচিত্র ডটকম/বিপিএল