রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫ , ২৪ কার্তিক ১৪৩২
  1. প্রচ্ছদ
  2. মতামত
  3. অনেকেই শুধু গোগ্রাসে খাচ্ছে- খাবার, বাড়ি, গাড়ি, জমি, টাকা এবং মানুষ

অনেকেই শুধু গোগ্রাসে খাচ্ছে- খাবার, বাড়ি, গাড়ি, জমি, টাকা এবং মানুষ

অপরাধ করেও শিকদার গ্রুপের দুই ভাই এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে চেপে ভেগে যাওয়া এবং বাবার মৃত্যুর পর ফিরে এসে আয়েশ করে থাকার ঘটনা, মুনিয়া নিহত হওয়ার মামলার মূল আসামির ঘুরে বেড়ানো এবং হাজি সেলিমের ছেলের জামিন লাভের ঘটনা প্রমাণ করছে অর্থনীতির চালিকা শক্তি কারা এবং কী।

একজন স্কুল শিক্ষক স্কুলে ক্লাস নেয়ার বদলে ঢাকার মগবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে সব্জি বিক্রি করছেন, সংসার চালানোর জন্য। করোনাকালে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তার সামনে আর কোন উপায় ছিল না। পত্রিকায় ছবিটি দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে গেল। কঠিন কঠোর ক্রান্তিকাল কিভাবে একজন মানুষের পরিচিতি পাল্টে দিলো।

সব্জি বিক্রি করাটা অসম্মানের কিছু নয়, বরং চুরি করা, মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ভন্ডামি করা বা জনগণের করের টাকা পকেটস্থ করাটা অনেক বেশি লজ্জার। এরপরেও যখন অভাবের তাড়নায় একজন শিক্ষককে রাস্তায় নামতে হয়, তখন তা সত্যিই কষ্টের এবং সমাজের জন্য লজ্জার।

এদিকে অন্য একটি খবরে দেখলাম করোনার মধ্যেও বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার এমডি। পৌনে দুই লাখ টাকা থেকে তার বেতন এখন ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই বেতন বাড়ানোর অনুপ্রেরণাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিও বেতন বাড়ানোর আবেদন করেছেন। তিনি চেয়েছেন মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা। দীর্ঘ চাকুরি জীবনে কোথায় দেখিনি যে এইভাবে আবদার করে বেতন বাড়ানোর ঘটনা।

জানামতে সব অফিসেরই একটি নির্দিষ্ট পে-স্কেল থাকে এবং সেভাবেই কম হোক, বেশি হোক বেতন বাড়া-কমা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই আবদারটা মেনেও নেয়া হচ্ছে। জনগণের করের টাকায় যাদের বেতন হয়, তারা কিভাবেইবা নিজের ইচ্ছায় বেতন নির্ধারণ করতে পারেন?

একই দেশ, একই সমস্যা অথচ মানুষের জীবনবোধ ও সমস্যার কত ফারাক, কতটা বৈপরীত্য। যখন দেখি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য করের উপর ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়েছে, তখন আবার প্রশ্ন জাগে তাহলে আমার কষ্টার্জিত আয়ের উপর, নিয়মমাফিক কর প্রদানের ক্ষেত্রে কর বেশি কেন? আর কালো টাকার উপর নির্ধারিত কর কম কেন? কিসের স্বার্থে বা কার স্বার্থে সরকার কালো টাকাকে উৎসাহিত করছে? যদিও জানি প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তর তো জানা।

অথচ আমরা যারা সাধারণ চাকরি করি, ব্যবসা করি তারা যতোটুকু সম্ভব নিয়মিত কর প্রদানের চেষ্টা করি। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা প্রতিটি পরিবারের কিন্তু এরপরও কর ফাঁকি দেয়ার চিন্তাই করে না অধিকাংশ মানুষ। অথচ আমাদের করের টাকায় যারা চলে, তাদের লাগামহীন চাহিদার কোন শেষ নাই। তারাই রাষ্ট্রযন্ত্র চালানোর ক্ষমতা পেয়েছেন, আর আমরা তাদের অধীনস্ত।

করোনা এসে আমাদের দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্তের জীবনকে একেবারে নি:শ্বেষ করে দিয়েছে। নিম্নবিত্তের অবস্থা তো আরো করুণ। তবে সবচেয়ে কঠিন ধাক্কা খেয়েছে সেইসব মধ্যবিত্ত, যারা নতুন করে নিম্নবিত্তের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক জরিপের তথ্য বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে মার্চে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ তাদের বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার সামর্থ্য ক্রমে কমছে।

করোনার দুইটি ঢেউয়ে অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিক খালি হাতে দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের কাজে ফিরে যাওয়া এখনো অনিশ্চিত। দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ বলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকই অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ফলে এইসব শিল্পের সাথে জড়িত মানুষ, পরিবার আয়হীন হয়ে পড়ছেন। প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। নতুন করে শুরু হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ।

করোনাকালে কপাল খুলে গেছে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিক, ঋণখেলাপিদের। তারা লোভের জিহবা আরো বড় করে বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সব তাদের হাতে। এই মহামারিতেও আমাদের সামনে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে হাজির হলো জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতাল।

অপরাধ করেও শিকদার গ্রুপের দুই ভাই এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে চেপে ভেগে যাওয়া এবং বাবার মৃত্যুর পর ফিরে এসে আয়েশ করে থাকার ঘটনা, মুনিয়া নিহত হওয়ার মামলার মূল আসামির ঘুরে বেড়ানো এবং হাজি সেলিমের ছেলের জামিন লাভের ঘটনা প্রমাণ করছে অর্থনীতির চালিকা শক্তি কারা এবং কী।

দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে বাড়তে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে থাকা, খাওয়ার খরচের হিসাবে বাংলাদেশের রাজধানীর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের উপরে। অর্থাৎ ওয়াশিংটনের চেয়েও ঢাকার থাকা-খাওয়ার খরচ বেশি। গবেষণা সংস্থা ‘মার্সা’র কস্ট অফ লিভিং সার্ভের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকার ৩৮তম স্থানে রয়েছে ঢাকা। এরপর ওয়াশিংটন।

পাঁচটি মহাদেশের চারশোরও বেশি শহরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেক্ষেত্রে অন্তত ২০০টি বিষয়ের তথ্য নেওয়া হয়ে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে বাড়ি ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, খাবার, পোষাক, গৃহসামগ্রীর দাম ও বিনোদন। মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের উপর লক্ষ্য রেখে এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐ তালিকা প্রকাশ করেছে মার্সা। কাজেই এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের শহুরে মধ্যবিত্তদের জীবনধারণ করাটা কতটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজেই অনুমেয়।

অথচ এই দেশেই এমন একটা ভোগবাদী শ্রেণী গড়ে উঠেছে, যারা শুধু খাই খাই করছে। এভাবে খেতে খেতে তারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে, নীতি-নৈতিকতাকে কবর দিচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করছে, বাজার ব্যবস্থাকে অসম করে তুলেছে, ঘুষ, দুর্নীতির চর্চা করে নিজেদের উদরপূর্তি করছে এবং সেইসাথে সমাজের একটা বড় অংশকে অসাধু করার ফাঁদ পেতে চলেছে। এ একটা ভয়াবহ চক্র।

মাঝেমধ্যে মনে হয় এইসব দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের সন্তানরা কী ভাবে, তারা কীভাবে বড় হয়, তারা কি কোনদিনও বাবা বা মায়ের লোভী দিকটা দেখতে পারে? তারা কি বাবা মাকে শুধরানোর চেষ্টা করে? হয়তো যেদিন তারা বুঝতে পারবে, সেদিন হয়তো দেখবে তাদের অবস্থাও একদিন চিহিরোর মতো হয়ে গেছে। একটি লেখায় চিহিরোর গল্পটা পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল এরকম —

জাপানের স্টুডিও জিবলির এনিমেটেড ফিল্ম “স্পিরিটেড অ্যওয়ে” তে দেখানো হয়েছে বাবা মায়ের সাথে নতুন শহরে আসে ছোট্ট মেয়ে চিহিরো। আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে একটি ছোট্ট বনের ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। সেই বনের ভেতরে দিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ সামনে দেখে একটি প্রাচীন বাড়ীর গেট ও একটি আজব মূর্তি।

চিহিরো পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে ভয় পায়, ফিরে যেতে চায়। বাবা মা তাকে গাড়িতে থাকতে বলে। বলে তারা বাড়িটির ভেতরটা দেখেই চলে আসবে। একা একা ভয় পেয়ে চিহিরো তাদের পিছু নেয়। চিহিরোর বাবা-মা বাড়িটির ভেতরে গিয়ে দেখে বাড়িটির অন্যদিকে একটি বাইরে বেরুবার পথ। সেটি দিয়ে এগিয়ে তারা দেখে ভিন্ন একটি শহর কিন্তু সেখানে কোন লোকজন নেই।

সেখানে খাবারের সুন্দর গন্ধ পেতে থাকে তারা। একটু এগিয়েই তারা দেখে টেবিলে সারি সারি খাবার রাখা কিন্তু কোন ওয়েটার বা সেলসম্যান নেই। একটু ডাকাডাকি করে মা-বাবা ভাবে, সমস্যা নেই, কাউন্টারে লোক এলে বিল দিয়ে দেবে তারা, ক্রেডিট কার্ড তো আছেই। সুস্বাদু খাবারগুলো খেতে শুরু করে তারা।

ওদিকে পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে চিহিরোর ভয় আর শঙ্কা কাটে না, তাই সে কিছু খায় না। বাবা মা’কে ছেড়ে আজব ভীতিকর এলাকাটা একটু ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে চিহিরো। আগে কখনও খায়নি এমন সব সুস্বাদু খাবার গোগ্রাসে খেতে থাকে চিহিরোর বাবা-মা। চিহিরো ঘুরে এসে পেছন থেকে দেখে মা বাবা বেশ মোটা হয়ে গেছে খেতে খেতে। ভয় পেয়ে তাদের ডাকলে তারা ফিরে তাকায়। চিহিরো দেখে শুকরে পরিণত হয়েছে তার বাবা-মা।

আমাদের অনেকেই চিহিরোর বাবা-মায়ের মত শুধু গোগ্রাসে খাচ্ছে, খাবার, বাড়ি গাড়ি, জমি, টাকা, মানুষ। তারা ভুলে যাচ্ছে মানুষের মনে লজ্জা, ভয়, কল্পনা, রুচি স্বপ্ন, আদর্শ, চরিত্র, নাগরিকবোধ, সদাচারণ, সৃজনশীলতা, সম্মানবোধ, মর্যাদা, পরিস্থিতি বিবেচনা, কমিউনিটি ফিলিংস, সৃজনশীলতা অনেক কিছু থাকে, শুধু ভোগ করাই থাকে না। সেইসব অসৎ মানুষের শিশুদের সামনে আসলে চিহিরোর মতই দুটি পথ খোলা, হয় শুকরে পরিণত হওয়া বাবা মা কে আবার মানুষে পরিণত করা অথবা নিজেরও শুকর হয়ে যাওয়া।

লেখক: সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স চার্চে বোমা হামলা: অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:৪০

৪ দিনের সফরে চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:৩৩

দুই দিনের সফরে পাবনায় রাষ্ট্রপতি

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:৩৯

সাপের অ্যান্টিভেনম সব উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশ

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:৩৫

টঙ্গীতে তুলার গুদামে আগুন

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:২৩

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসকদের বদলি-পদায়ন বন্ধ

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:১৮

রিজভীর পা ধরে সালাম করে ক্লোজড হলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:১৪

রাতের তাপমাত্রা কমবে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:০৮

যানবাহন চলাচলের জন্য চালু হলো টিটিপাড়া আন্ডারপাস

৮ নভেম্বর, ২০২৫, ২:৪০

জাহানারা আলমের বিস্ফোরক বক্তব্যে তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন

৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:২৩

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত এলজিইডি: প্রমোশন না পেয়ে হতাশ শত শত প্রকৌশলী

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:১১

৬ কোটি টাকায় এলজিইডির বড় প্রকল্পের পরিচালক তোফায়েল আহমেদ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০৮

এলজিইডির এলকেএসএস’এর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার নুরুল ইসলামের খুঁটির জোর কোথায়?

৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:০৭

আবাসিক এলাকায় গরু-মুরগী খামার: চিথলিয়ার পরিবেশ বিপর্যয়

২৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২১

জুয়েল : একজন প্রতিভাবান ক্ষণজন্মা কণ্ঠশিল্পীর নাম

১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৯

প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের ভূমিকায় প্রশ্ন

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:২৪

ভবন দখল করে রাখার অভিযোগে: ডিআরইউ’র বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ

২৩ জুলাই, ২০২৫, ৪:০৬

এলজিইডি যেন দিশেহারা জাহাজ: ১৬ দিন অনুপস্থিত প্রধান প্রকৌশলী!

৩১ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৫৪

এলজিইডিতে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হানিফ মৃধা

৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:৩৮

সর্বকনিষ্ঠ মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার ৯ বছরের ওয়ারিসা

৭ জুলাই, ২০২৫, ৭:৪২


উপরে